Answered 3 years ago
পাকিস্তানের একেবারে উত্তর পশ্চিম প্রান্তে আফগান সীমান্ত ঘেঁষে পাহাড় ঘেরা দুর্গম একটি জেলা। নাম চিত্রল। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো দুর্গম পাহাড় ঘেরা একটি জনপদ। নাম কাফিরস্থান।
একে ত দুর্গম পাহাড় পর্বত সংকুল চিত্রল উপত্যাকা, তার মধ্যে আবার আরেক দুর্গম জনপদ কাফিরস্থান। এই ডবল দুর্গমের ধকল সামলিয়ে সেখানে যাওয়া সহজ নয়। তবুও, অনেক টুরিস্ট ভিড় জমায়। কেন যায় সে কথা নিয়ে এবং আমার নিজের দেশের নাম শুনে চমকে যাওয়ার পটভূমিতে এই গল্প। ভ্রমণ কাহিনীও বলতে পারেন।
কাফিরস্থানের একাংশ ১৮৯৫ সালে আফগান আমির আব্দুর রহমান দখল করে নেন। নতুন নাম রাখেন নুর স্থান, আলোকিত জনপদ। একাংশ পাকিস্তানের চিত্রল উপত্যকায় রয়ে গেছে।
কাফিরস্থানের নাম হয়তো শুনেন নাই। শুনবেন বা কি করে? অনেক পাকিস্তানিরাই জানে না সেটা আবার কোথায়? পাকিস্তানের খুব কম লোকেরই সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।
ঘটনাক্রমে, প্রায় দুই যুগ আগে সেখানে যাওয়ার সুযোগ এসে যায়। একটা আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগে আমার মিশন ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে চিত্রলের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করা।
ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাপারে আমি এক্সপার্ট নই তা সবাই জানেন। কিন্তু কনসালটেন্সি কাজে দক্ষতার খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে না। এখান থেকে, সেখান থেকে মাল মসলা জোগাড় করে, সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে সাজিয়ে গুছিয়ে রিপোর্ট লিখলেই দায়িত্ব শেষ। রেগুলার চাকরির মত তেমন কোন জবাবদিহি করতে হয় না কিন্তু কাজের শেষে ভালো অংকের একখানা চেক পাওয়া যায়।
তাহলে চলুন আমার সাথে সেই রহস্যময কাফিরস্থানে।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চিত্রল জেলা চারিদিকে উচু পাহাড়ে ঘেরা। পেশোয়ার থেকে সেখানে যাওয়ার একটাই মাত্র গিরিপথ। নাম লোয়ারি গিরিপথ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট উপরে।
গ্রীষ্মকালে তিন চার মাস এই গিরিপথ বেয়ে কষ্টেসৃষ্টে লোকজন আসা-যাওয়া করে। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় জীপ, ল্যান্ড রোভার ও ট্রাক চলে শম্বুক গতিতে। সামান্য একটু গিরিপথ পার হতে লেগে যায় দূই তিন ঘন্টা।
মাঝে মাঝে পাহাড়ের ঢাল থেকে পাথর পড়ে রাস্তা আটকে যায়। ড্রাইভার প্যাসেঞ্জার মিলে পাথর সরিয়ে আবার পথ চলা শুরু হয়।সহমর্মিতা ও সহযোগিতার সুন্দর উদাহরণ। আমাদের দেশ হলে সবাই গালে হাত দিয়ে বসে থাকত, কখন সরকার এসে তাদের রাস্তা ঠিক করে দিবে সে আশায়। গিরিপথটি শীতকালে সাত আট মাস বরফে ঢাকা থাকে। গাড়ি চলার উপায় নাই।
তখন বলতে গেলে ৮ মাস চিত্রল পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই, শীতকালের আ্গেই চিত্রলের লোকজন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে মজুদ করে রাখে।
ahmedafsar021 publisher