Answered 2 years ago
সে দিনের কথা হয়ত ভুলব না কোনদিন। ছাত্রজীবনের সেই প্রথম নিজের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার যে কান্না।
২০১৪ সাল। আমি তখন উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। পদার্থ বিজ্ঞান ২য় পত্রের পরীক্ষা ছিল সেদিন। তার দুদিন আগে হয়েছিল পদার্থ বিজ্ঞান ১ম পত্রের পরীক্ষা। ১ম পত্র খুব একটা ভালো হয়নি বলে ২য় পত্র পরীক্ষার আগের রাতে আমার ছাত্রজীবনের সবচেয়ে দুর্লভ ঘটনা ঘটিয়েছিলাম। বেশি রাত জেগে পড়াশোনা করেছিলাম। সেদিনের আগে আমি কখনো রাত ১০ টার পড়ে আর পড়াশোনা করিনি। সেদিন পড়েছিলাম রাত ৩টে পর্যন্ত। আম্মু তো অবাক আর দুশ্চিন্তায় ছিল। আমার পাশে বসেছিল পুরোটা সময়। যখন ঘুমোতে যাই তখন দেখি আম্মু কাঁদছেন আমার দুশ্চিন্তা দেখে। কারণ ওইদিন আমি আমার পড়াশোনা নিয়ে প্রথম খুব সিরিয়াস হয়েছিলাম।
যাই হোক পরেরদিন পরীক্ষার হলে প্রশ্ন পাওয়ার পর আমাদের পুরো ব্যাচের চক্ষু কপাল থেকে মাথায় উঠছিল অনবরত। এখানে বলে রাখি আমাদের প্রশ্ন দুই ভাগে ভাগ করা ছিল। এক অংশ লিখিত ৪০ মার্ক আর বাকি অংশ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ৩৫ মার্ক।
লিখিত প্রশ্নে কোনরকম টেনেটুনে পাশ করব সেই ভরসা ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধল বহুনির্বাচনী প্রশ্নে। পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে সব বন্ধুরা মিলে বই, গাইড ইত্যাদি থেকে প্রশ্নের উত্তরগুলো মেলানোর চেষ্টা করছি। তখন দেখা গেল আমার মোটে ১২টি সঠিক আর ৪টি অনিশ্চিতয়তার মধ্যে আছে। যেখানে ১৪ পেলে পাশ করব সেখানে মাত্র ১২টি সঠিক। আর এই এক অংশে ফেল করলে পুরো পদার্থ বিজ্ঞানেই ফেল।
ভাবুন তো তখন কি অবস্থা আমার। এই পরিস্থিতি আমাদের প্রায় সবারই। সেদিন প্রথম পরীক্ষা কেন্দ্রের মাঠে বসেেআমরা কয়েকজন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর ও আমার মত অবস্থা। ওর ছিল ১৩ টি সঠিক।
সেদিন প্রচুর কান্না করেছিলাম দুজন। সে কি কান্না। ফুপিঁয়ে ফুপিঁয়ে কান্না। একটি আম গাছের নিচে বসে ২জন কাঁদছি আর ভাবছি যদি ফেল হয়! ফলাফল প্রকাশের দিন পর্যন্ত আমরা ৩ বন্ধু প্রতিদিন বিকেলে হাটতাম আর হাহুতাশ করতাম এই বিষয় নিয়ে। সবচেয়ে দুঃখের কারণ ছিল, বিষয়টা পদার্থ বিজ্ঞান বলে। বড় ভয় করতাম বিষয়টাকে। পড়াশোনা নিয়ে সেদিনের মতো দুঃখ আমি কখনো পাইনি তার আগে। যাকে বেশি ভয় পাই সেই বিষয়টা যদি এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে তখন কি অবস্থা আমার !
তবে সেই কান্না আবার ফিরে এসেছিল ফলাফল ঘোষনার দিন। যখন দেখলাম আমরা সবাই পদার্থ বিজ্ঞানে পাশ করেছি। আমি আর আমার বন্ধু একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। দুঃখের কান্নার চেয়ে সেদিনের সুখ কান্না আরো বেশি পরিমানে ছিল। আশেপাশের সবাই ভেবেছিল আমরা বোধহয় ফেলই করেছি।
বন্ধুর বড় বোনের কথাটি আজো মনে পড়ে, “তোদের ঢং দেখে আর বাঁচিনা। এমন ভাব করছিস যেন দুজনেরই বউ মরছে!”
সেই দুটো দিনের কথা ভাবলে আজো খুব হাসি পায়। দুঃখ আর সুখ স্মৃতি মেশানো হাসি।
.
উত্তরটি লিখছি আর আমার হাসি পাচ্ছে। হাসছি।
দেখে ফেলেছে আমাদের বাসার কাজের মহিলাটি। বলছে, “ছোটবাবু একলা একলা হাসতাছুইন ক্যা?” (ছোটবাবু একা একা হাসছেন কেনো?)।
একা একা হাসছি এ কথা কিছুক্ষনের মধ্যে পুরো বাসায় ছড়িয়ে যাবে।
যাই হোক স্মৃতিচারন এখানেই শেষ। গিয়ে ওদিকটা দেখি।
ও হ্যা, অনেক ধন্যবাদ আত্মজা দিদি পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে আমার মনটাকে ভালো করিয়ে দেওয়ার জন্য।
Alamin publisher