Answered 2 years ago
১। বিয়ের পর হানিমুনে কক্সবাজার গেলাম। সারাদিন বউকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম। ইনানী বিচ গেলাম। সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে বেড়ালাম। বার্মিজ মার্কেটে গেলাম। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরলাম। চাবি দিয়ে রুমের দরজা খুলতেই- দেখি আমার বউ ঘরের মধ্যে। সে ভীষন রাগ করেছে। বলল, আমাকে ঘরে রেখে তুমি সারাদিন কোথায় ছিলে? আমি তো অবাক! পাশে তাকিয়ে দেখি আমার বউ আমার পাশে নেই। অথচ দুরজা খোলার আগেই আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। খাটে বসে থাকা বউকে বললাম- স্যরি। খুব স্যরি। আমি একজন আধুনিক মানুষ। আমার মধ্যে কোনো কুসংস্কার নেই। অথচ অনেক চিন্তা ভাবনা করেও আমি এই ঘটনার ব্যাখ্যা পাইনি। আমার বউ যদি রুমেই থাকে, তাহলে সারাদিন আমি কার সাথে ঘুরে বেড়ালাম? মেয়েটা তো আমার সাথেই ছিলো। হঠাত করে কোথায় চলে গেলো?
২। সৌদি থাকে আমার বন্ধু জাহাঙ্গীর। আমরা একই স্কুলে পড়েছি। দারিদ্রতার কারনে বন্ধু চলে যায় সৌদি। সেখান থেকে সে আমাকে নিয়মিত ফোন দেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে। কেউ দেশে ফিরলেই জাহাঙ্গীর আমার জন্য খেজুর, জমজম পানি ইত্যাদি পাঠিয়ে দিতো। যাইহোক, টানা ছয় বছর সে সৌদি থাকলো। এবার দেশে ফিরবে। এখন তার আর্থিক অবস্থা অনেক উন্নত। নারায়নগঞ্জে জমি কিনে বাড়ি করেছে। মেয়ে ঠিক করে রাখা হয়েছে, দেশে ফিরে সে বিয়ে করবে।
আমার বন্ধু দেশে আসার দুদিন আগে স্ট্রোক করে মরে গেলো। এই ঘটনায় আমি ভীষন কষ্ট পেলাম। সৌদি থেকে দেশে লাশ ফিরিয়ে আনতে এক মাসের বেশি সময় লাগলো। যখন আমি একা থাকি, তখন প্রায়ই জাহাঙ্গীর আমার কাছে আসে। প্রথম প্রথম ভয় পেতাম। এখন আর ভয় পাই না। একদিন আমি দুপুরবেলা রমনা পার্কে বসে আছি। জাহাঙ্গীর আমার পাশে এসে বসলো। চুপচাপ। কোনো কথা না। এরপর একদিন রাতে আমি সিগারেট খেতে ছাদে গিয়েছি, দেখি বন্ধু জাহাঙ্গীর। গত পরশু বাসায় কেউ নেই। আমি একা। কি কারনে বসার ঘরে এসেছি। দেখি বন্ধু জাহাঙ্গীর সোফায় বসে আছে। আমি বিশ্বাস করি দুনিয়াতে কারন ছাড়া কিছুই ঘটে না। মৃত মানুষ ফিরে আসতে পারে না। এগুলো নিশ্চয়ই আমার অবচেতন মনের কারসাজি।
৩। এটা আমার বিয়ের আগের ঘটনা। বাসার সবাই নাটোর গিয়েছে। ছোট চাচার বিয়ে। আমি যাইনি। আমার জন্য মা খাবার রান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে। জাস্ট ওভেনে গরম করে খেলেই হবে। মাঝে মাঝে আমাকে চরম আলসেমিতে পায়। খাবার গরম করতে হবে, এই কারনে না খেয়েই ঘুমাতে গেলাম। হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কে যেন কলিং টিপছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দুতো। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে খুব। আমি দরজা খুলে দেখি এক সুন্দর মতো মেয়ে দাড়িয়ে আছে। সুন্দর একটা শাড়ি পরা। শাড়ি ভেজা। গায়ের সাথে লেপটে আছে। মেয়েটার চুলে বেলী ফুল। সুন্দর গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমি বললাম, আপনি কে? মেয়েটা বলল, আগে ঘরে ঢুকতে দাও। দেখো না ভিজে গেছি। টাওয়াল দাও। গরম এক মগ চা দাও। আমরা চা খেলাম। অনেক গল্প করলাম।
সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলাম। সাথে সাথে আমার মেয়েটার কথা মনে পড়লো। কি সুন্দর স্বপ্ন দেখলাম! দারুন রোমান্টিক স্বপ্ন। মনট বেশ খুশি খুশি লাগছে। বিছানা গুছাতে গিয়ে দেখি আমার বালিশের নিচে বেলী ফুল। বেলি ফুল কোথা থেকে এলো? তার মানে মেয়েটা সত্যি এসেছিলো? মেয়েটার চুলে আমি বেলী ফুল দেখেছি। নাটক সিনেমায় এরকম হয়। বাস্তবে এরকম হয় না। বেলী ফুল কোথা থেকে এলো আমার ঘরে বালিশের নিচে? বাসায় তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই! এই বেলী ফুলের রহস্য আমি আজও সমাধান করতে পারিনি। মাঝে মাঝে এরকম অলৌকিক ঘটনা ঘটে বলেই জীবন সুন্দর।
৪। ছোটবেলার কথা। স্কুল থেকে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছি। বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। ইচ্ছা করছে মোরগ পোলাউ খেতে। মনে মনে ভাবছি মা কি আজ মোরগ পোলাউ রান্না করেছে? ঠিক তখন কোথা থেকে একলোক এলো। অদ্ভুত পোশাক পরা। মাথার চুল লম্বা। সে আমার হাতে এক প্যাকেট খাবার দিলো। বাসায় এসে দেখি- প্যাকেটে মোরগ পোলাউ। আর মা রান্নাই করেনি। মার শরীর ভাল না। এরকম ঘটনা আমার জীবনে বহু আছে। একদিন সন্ধ্যায় মাঠ থেকে খেলাধূলা করে বাসায় ফিরছি। বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। পটেটো চিপস খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু পকেটে টাকা নেই। মন খারাপ করে বাসায় ফিরছি। আমাদের বাসার গলিতে ঢুকতেই দেখি একটা চিপসের প্যাকেট। কে রাখলো আমার চলার পথে চিপসের প্যাকেট? এরকম তুচ্ছ ঘটনা গুলো কে ঘটায়? ঈশ্বর?
সেন্টাল স্কুলের মাঠে আমি ফুটবল খেলতাম। সেই সময় মাঠের এক কোনায় একটা পুকুর ছিলো। একদিন দুপুর বেলা মাঠে ফুটবল খেলছি। সেদিন ছিলো শুক্রবার- আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমার বল টি মাঝ পুকুরে চলে যায়। জুম্মার নামাজের জন্য পুরো মাঠ ফাঁকা হয়ে গেছে। আমি আমার বল আনতে পুকুরে নামি। এবং ডুবে যাই। আমি সাঁতার জানি না। পুকুরে ডুবে যাওয়ার পর একটা মেয়েকে দেখতে পাই। মেয়েটা ভীষন সুন্দর। সে আমাকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে। এইসব ঘটনার কোনো ব্যখ্যা পাই না। সম্ভবত এসব আমার অবচেতন মনের কল্পনা। কার্যকারন ছাড়া দুনিয়াতে কিছুই ঘটে না
jakirrana publisher